হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলা ও গুলি বর্ষণে নিহতের তুলনায় ইসরায়েল দ্বারা সৃষ্ট অনাহারে বেশি ফিলিস্তিনি মারা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ‘খাদ্য অধিকার’ বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত মাইকেল ফখরি।
জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত আরও বলেন, গাজায় দুর্ভিক্ষজনিত ক্ষতির রেশ টানতে হবে ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ কয়েক প্রজন্মকে।
গাজার ক্ষুধা পরিস্থিতি নিয়ে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এক নতুন প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন মাইকেল ফখরি। এরপর তিনি ওই মন্তব্য করলেন। খবর মিডল ইস্ট আই।
ওই প্রতিবেদনে তিনি, কীভাবে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগণকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার লক্ষ্যে গাজায় খাবার ঢুকতে না দিয়ে অনাহার তৈরি করছে তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন।
মাইকেল ফখরি বলেন, ‘যুদ্ধ–পরবর্তী ইতিহাসে কখনো কোনো জনগোষ্ঠীকে এত দ্রুত ক্ষুধার সম্মুখীন ও তীব্র ক্ষুধায় পতিত হতে দেখা যায়নি, যেমনটা গাজায় বসবাসরত ২৩ লাখ মানুষের ক্ষেত্রে ঘটেছে।’
ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ৩৪ ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা গেছেন, যাদের বেশির ভাগই ছিল শিশু।
প্রতিবেদনে তিনি ইসরায়েল কিভাবে গাজার খাদ্যের উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করছে তা বিস্তারিত তুলে ধরেন। ইসরায়েলের এসব পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে ফসল ও খামারে বিষ প্রয়োগ, কৃষি জমি ধ্বংস করা, বন্দর ও মাছ ধরার জাহাজ ধ্বংস করা। এতে গাজার পুরো জনগোষ্ঠী মানবিক ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজাবাসীর এই নির্ভরশীলতা পুঁজি করে তাঁদের ক্ষতি করতে ও মেরে ফেলতে রাজনৈতিক ও সামরিক অস্ত্র হিসেবে মানবিক ত্রাণ ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে মানবিক ত্রাণ প্রবেশে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করার বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে ফখরি বলেন, গাজাবাসীকে ক্ষুধায় মেরে ফেলার ইসরায়েলি কৌশলের শুরু ৭ অক্টোবরের অনেক আগে থেকেই। গাজায় খাদ্য প্রবেশে দেশটি বাধা দেওয়া শুরু করে সেই ১৯৯১ সালে আর ২০০০ সাল থেকে উপত্যকাটি পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রেখেছে তারা। এ অপতৎপরতা এখন শুধু গাজাতেই সীমাবদ্ধ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘গত ৭০ বছরের বেশি সময় ধরেই ফিলিস্তিনিদের খাদ্যব্যবস্থা ধ্বংস করে আসছে ইসরায়েল। এ সময়ের মধ্যে দেশটি তাঁদের বাগান ও খামার ধ্বংস করেছে। এ ছাড়া হয়রানি বা হত্যা করেছে কৃষক, জেলে ও মেষপালকদের।‘
তিনি আরও বলেন, ‘(ফিলিস্তিনবাসীকে) ক্ষুধায় রাখার বিষয়টি সব সময়ই ইসরায়েলের ইচ্ছাকৃত, আন্তর্জাতিক, কাঠামোগত ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জাতিসংঘের এ বিশেষ দূত বলেন, এ সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় ইসরায়েলের ওপর বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবরোধ আরোপ করা।